Home » , , » যে জীবন ফরিঙের- ০২

যে জীবন ফরিঙের- ০২

যে জীবন ফরিঙের-০২
=============================

রাবেয়া বেওয়া, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের "মধ্য গুজিমারীতে" যে কয়টি অসহায় পরিবারের সন্ধান আমরা পেয়েছি তাদের মধ্যে রাবেয়ার পরিবার একজন।

স্বামী মারা গেছেন ছয় বছর আগে। আমাদের পিতৃপ্রধান সমাজে স্বামী মারা যাওয়া মানে পরিবারটি লন্ডভন্ড হওয়া।
অনেকটা আচ্ছাদন বিহীন ঘর।

রাবেয়া বেওয়ার ভাগ্যের নির্মমতা এটুকুতেই থেমে যেতে পারত, সেটা হলে অন্তত বেঁচে থাকাটা কিছুটা সহজ হত।
কিছুটা অন্তত.....
কিন্তু ভাগ্য যে আরও নিষ্ঠুর খেলার ছক কষবে, কে জানত?

স্বামী মারা যাওয়ার ঠিক একবছরের মাথায় মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু সমেত ২ (দুই) একর ধানি জমি ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেল।

দৃষ্টিসীমায় শুধু জলে ছল ছল, জলে ছল ছল।

সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্রের পেটে বিলীন হল আরেকটি হতভাগা পরিবারের শেষ আশ্রয়টুকুও।

সব হারিয়ে রাবেয়া আশ্রয় খোঁজে এবাড়ি ওবাড়ি।

একটি সচ্ছল পরিবার যখন চার বছরের শিশুর জন্য হরলিক্স, ডানো কেনে তখন রাবেয়া প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে হাত পাতে পিতৃহীন সন্তানটিকে বাঁচানোর প্রত্যাশায়।

সর্বশেষ রাবেয়ার আশ্রয় হয় দুই বছর আগে। মধ্য গুজিমারীর চরে নির্বাচনী কাজের সুবিধার্থে কোন এক মেম্বার পদপ্রার্থী সেখানে একটি টীনের চালা তোলে। নির্বাচন শেষ হলে সেই ঘরটিই হয় রাবেয়ার মাথা গোজার ঠাঁই।

এভাবেই কেটে যাচ্ছে রাবেয়ার দিন।
আজকাল আর রাবেয়াকে কারো বাড়িতে খাবার খুঁজতে হয় না।
দশ বছরের দুধের শিশুটি সংসারের হাল ধরেছে যে....
অনন্তপুর বাজারের কোন এক মুদি দোকানে দিন-কামলা দেয়।

যে বয়সটায় আপনি-আমি, আমরা মা-বাবার কাছে আবদার করে ভিডিও গেম কিনে নিয়েছি,  টাকা না দিলে মুখ ফুলিয়ে স্কুল গিয়েছি সেই বয়সে দশবছরের শিশুটি পরিবারে টাকার জোগান দেয়ার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মাকে ছেড়ে একা ঘুমাচ্ছে কোন এক মুদি-দোকানের ফ্লোরে।
কি নির্মম বাস্তবতা!
কত নিষ্ঠুর পৃথিবী!

এই পর্ব শেষ করব ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে।
গতকাল টীমসহ আমরা যখন মধ্য গুজিমারী পৌছালাম তখন প্রবল নিম্নচাপে হাঁটা দায়।
সে কী বৃষ্টি আর বাতাস!
টীমের আল আমিন ভাই তো রীতিমত কাঁপছিলেন।

ঠিক সে সময়ে চোখ পড়ল রাশেদ নামের ছোট্ট ছেলেটির দিকে। আগেরবার সার্ভের কাজে গিয়ে রাশেদকে চিনেছিলাম। বুদ্ধি প্রতিবন্ধি রাশেদের গায়ে একটা ছেড়া শার্ট আর বাপের ছেড়া লুঙ্গি।

কোন ধনী পরিবারের দেয়া স্কুল ড্রেসের সাদা শার্ট গায়ে রাশেদ ঠকঠক করে কাঁপছিল।
ছেড়া শার্টটির হাতা রাশেদের হাতের নীচে ঝুলায় দিয়ে হাতমোজার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে।
জীবনযাত্রার মান এখানে কতটা নীচু একবার চিন্তা করুন।

আপনারা দক্ষিণে যান, মানবতার ওড়না উড়ান।

আপনাদের দেয়া ব্যবহৃত কাপড়গুলো ওরা রাস্তায় ফেলে দেয়, আপনাদের দেয়া কনডম দেখে নাউজুবিল্লাহ পড়ে।

তবু ঘুম ভাঙ্গে না আপনাদের!

একবারও চোখে পড়ে না, বাড়ির পাশের নদীটা পেরোলেই হাহাকার।
খাবারের জন্য হাহাকার, বীজের জন্য হাহাকার, কাপড়ের জন্য হাহাকার, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য হাহাকার।

কি অদ্ভুত একচোখা মানবতা আপনাদের!!আর কত!!
দারিদ্র্যসীমা কত তলানীতে গেলে আপনারা উত্তরে চোখ দিবেন?

জ্বী ভাই,
উত্তরের মানুষগুলোও শরনার্থী জীবনযাপন করছে, প্রতিবছর এক চর থেকে আরেক চরে যাচ্ছে বাঁচার তাগিদে।

ওরাও মানুষ।
ওরাও মুসলমান।

0 $type={blogger}:

Post a Comment

Thank's for your comment.

Popular Posts

All Copyright তোফার স্বপ্ন. Powered by Blogger.

আমার সম্পর্কে

রকেট অ্যাপ দিয়ে এনআইডি কার্ডের ফি পরিশোধের উপায় - Nid Fee Payment By Rocket

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন কিংবা ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য আবেদন করেন উভয় ক্ষেত্রেই সরকারি ফি জমা দিতে হয়। বিনা ফি ত...

Search This Blog

Blog Archive

Address

Address
Contact us

recent comments

recentcomments
[slideshow][technology]

vertical posts

[verticalposts][technology]

business

[business][grids]

ad space

ads 600

vehicles

[cars][stack]
[verticalposts][food]

our facebook page

about us

logo

Jupiter is a magazine responsive Blogger template. It has everything you need to make your blog stand out. This template is fully customizable and very flexible and we believe you will love it as much as we do.

Slide show

[people][slideshow]

health

[health][btop]

Subscribe Us

random posts

randomposts2
recent

Popular Posts

GENRES

Video Of the Day

video example

Facebook

 
Created By SoraTemplates | Distributed By Gooyaabi Templates