মারুফ আহমেদ
=============================
সাত বছরের ছোট্ট শিশু জয়। জাগতিক কোন বুঝ, দুনিয়াবী চাল বোঝার বয়স যার এখনও হয়নি। সেই শিশুটি আজ এতিমের মত এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে এক প্লেট ভাতের আশায়। এই বয়সেই বুঝে গেছে তার পেলটের ভাতটুকু কেউ তাকে বেড়ে দিবে না, নিজেকেই ব্যবস্থা করে নিতে হবে ।
প্রকৃত অর্থে জয় এতিম নয়, বাবা-মা দুজনেই আছেন। বাব ড্রাগ এডিক্টেড হওয়ায় তিনবছর আগে সংসার ভেঙ্গে যায়। মা কোথায় চলে গেছে জানে না সে, বাবা নতুন বিয়ে করায় সৎ মা জয়কে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। জয়ের আশ্রয় তাই নানা-নানীর জীর্ণ কুঠিরে।
জয়কে দেখেই প্রথম যে মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠল সে মুখটা আমার ভাতিজার। ঠিক তার বয়সের একটা ভাতিজা আছে আমার। বাড়িতে গেলে "চাচ্চু" "চাচ্চু" বলতে বলতে বাড়ি মাথায় তুলে রাখে, আমার পাশে শুয়ে আমার অনুপস্থিতিতে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা গড়গড় করে বলতে থাকে। একই বয়সে জয় যখন এক প্লেট ভাতের চিন্তা করে তিনবেলা, ঠিক সে বয়সে আমার ভাতিজা কখনও গেম খেলার জন্য ট্যাব, আবার কখনও ছোট চাচ্চুর মত লাল চকচকে সাইকেলের আবদার ধরে।
জয় কিংবা ছোট্ট ভাতিজার আবদারে একটা অদ্ভুত মিল আছে! জয়ের ইশারায় বারবার ভাতের আবদার কিংবা ছোট্ট ভাতিজার ট্যাব-সাইকেলের আবদার কোনটাই পূরণ করার সামর্থ্য রাখি না আমি।
আজ যখন টীমের সবাই মিলে মাটিডালিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম, জয় বারবার খাতির জমাতে আসছিল। বারবার, বারবার। বুঝতে পাচ্ছিলাম সে কি বলতে চায়, বিশ্বাস করুন বুঝে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। মানিব্যাগের শেষ সম্বল একটা পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে জয়ের একবেলার ভাতের আবদারও পূরণ হত না । সে কারণেই হয়ত কথা বলার ফাঁকে জয়ের মাথায় বারবার হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম, আর নিজের সাথে কথা বলছিলাম।
পুরো ব্যপারটা আড়চোঁখে খেয়াল করে যাচ্ছিলেন পল্লব দা। হয়ত বুজতে পেরেছেন জয় খেতে চাচ্ছে কিন্তু আমার কাছে টাকা নাই। হুট করে বলে উঠলেন, মারুফ যা ওকে কিছু খাওয়ায় আন। কথাটা শুনে আমতা আমতা করছিলাম, কিভাবে বলব টাকা নাই আমার কাছে। এক পর্যায়ে দাদা জোর করে পাঠায় দিলেন, হোটেলে নিয়ে গিয়ে জয়কে বসিয়ে পরোটা'র অর্ডার দিলাম। নাহ্, পরোটা সে খাবে না। তার কাছে খুচরো কিছু পয়সা আছে, বিশ টাকা হবে হয়ত। সেটার সাথে আমার টাকা যোগ করে ভাত খেতে চায়। "সারাদিন কিচ্ছু খাইনি ভাই"- কথাটা শুনে বুকটা মোঁচর দিয়ে উঠল।
শেষ পর্যন্ত পল্লবদা এসে ভাতের অর্ডার করে বিল দিয়ে চলে গেলেন। আমি ওর পাশে বসে টুকটাক কথা বলছিলাম। একটা পর্যায়ে গিয়ে যখন তার খাওয়া শেষ হল, হাত ধুয়ে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল।
উহহ, একটু ঢেকুরের কাছে পুরো পৃথিবীটাকে তুচ্ছ লাগছিল।
0 $type={blogger}:
Post a Comment
Thank's for your comment.